জিহাদের দিকে অধোগমন

একজন তরুণ তুর্কির জ্যোতির্বিজ্ঞানি থেকে ইসলামিক স্টেট যোদ্ধায় রূপান্তরণের কাহিনী

রাশিদ তোরাল তার নিজস্ব আভাসভূমি তুরস্কের আকাশের সম্মোহনী সব ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশ করার ফলে বহু লোক তার ভক্ত হয়। সে অনেকগুলো ছবি প্রকাশ করে, যেমন ধরুন ন্যাশনাল জিওগ্র্যাফিকের ওয়েব সাইটে। সে ফিনল্যান্ডে অ্যাস্ট্র\-ফিজিক্স পড়তে মর্যাদাকর গ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তি হয়। মনে হলো চৌকষ, আকর্ষনীয়, অভিযানপ্রিয়, বহির্মুখী এই ব্যক্তি যেন মহাকাশ নিয়ে গবেষণার জন্যই জন্মেছিলো।

কিন্তু তোরাল অন্য কিছু যেন চাইছিল। রক্ষনশীল বাড়িতে একজন ধর্ম পালনকারী মুসলমান হিসেবে যার বেড়ে ওঠা, সে কলেজে থাকার সময়ে জিহাদি ওয়েবসাইট দ্বারা আকৃষ্ট হয়, সে ইসলাম সম্পর্কে তাদের উগ্রবাদী ব্যাখ্যা মনে প্রাণে গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের গোড়ার দিকে, সে তার পরিবার এবং আরাম দায়ক জীবন থেকে লুকিয়ে বেরিয়ে যায়; যোগ দেয় সিরিয়ায় যুদ্ধরত ইসলামিক স্টেট(আই এস) জিহাদিদের সঙ্গে।
কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে আই এস এর হয়ে লড়তে গিয়ে গত অগাস্টেই তোরাল নিহত হয়। তার বয়স তখন ২৭ বছর।

আই এস এর আদর্শ এবং অপপ্রচারে আকৃষ্ট হয়ে হাজার হাজার মুসলিম তরুণ ইরাক ও সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের স্বঘোষিত খেলাফতের জন্য লড়াই করতে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। তোরালের মতোই অনেকেই সুযোগ সুবিধা এবং সম্ভাবনার জীবন ত্যাগ করেছে। তার ঘটনাটি অবশ্য সকলেরই দৃষ্টি কেড়েছে কারণ সে এক দশকের ও বেশি সময় ধরে বহু লেখা এবং ছবির মাধ্যমে তার এই রূপান্তরণের রেকর্ড রেখে গেছে।

তুরস্কের আন্তালিয়ার TUBITAK জাতীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কাছ থেকেই তোরাল ছায়াপথের এই ছবি তোলে এবং ২০১৪ সালের ৭ই অক্টোবর ফেসবুকে তা শেয়ার করে।  

তুরস্কের আন্তালিয়ার TUBITAK জাতীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কাছ থেকেই তোরাল ছায়াপথের এই ছবি তোলে এবং ২০১৪ সালের ৭ই অক্টোবর ফেসবুকে তা শেয়ার করে।  

বছরের পর বছর জুড়ে তোরাল নিজের ছবি, কখনো বা বিড়ালের খেলা করার ছবি এবং মহাকাশের চিত্র ও ধারণ করেছে; পৃথিবীর বাইরের স্বরূপ এবং তার নিজের ধর্ম নিয়ে ভাবনার কথা তুলে ধরেছে, অবিশ্বাসিদের তিরস্কার করেছে। গত বছর অনলাইনে প্রকাশিত একটি বিস্তারিত চিঠিতে, সে আই এস এর সঙ্গে তার প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে। একঘেয়েমিপূর্ণ সময়, কঠোর প্রশিক্ষণ, কৌশলী বিমান আক্রমণ সবকিছুই সে তুলে ধরেছে এই বিবরণে।

সে ধর্মের ধ্বজ্জাধারীর মতোই, মানুষের মস্তক ছিন্ন করা কিংবা নারীদের যৌনদাসী করার মতো বর্বর আচরণকে সমর্থন করে যায় “যে ব্যক্তি জিহাদে লড়াই না করে কিংবা জিহাদ সম্পর্কে চিন্তা না করেই মৃত্যুবরণ করে, সে মুনাফিক হিসেবেই মারা যায়” , এমন কথাই ভন্ড তোরাল ফেইসবুকে লেখে, হাদিসকে উদ্ধৃত করে। মূল ধারার ইসলামি ওলামারা যেমন, মোহাম্মদ আবদেল ফাদেল আপত্তি জানিয়ে বলেন যে উগ্র জঙ্গিবাদীরা বিশ্বাস ও জিহাদের অর্থকে বিকৃত করছে এবং বস্তুত এই ধর্ম সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধ করছে না এমন আসামরিক লোকজনের উপর আক্রমণের নিন্দে করে।

কিন্তু এই উগ্রবাদ এবং সহিংস সমাপ্তির দিকে তোরাল কেন ধাবিত হলো? সামাজিক যোগযোগের মাধ্যমে দেওয়া তোরালের পোস্ট পর্যালোচনা করে এবং সিরিয়ায় থাকার প্রথম দিককার অভিজ্ঞতা সম্বলিত তুর্কি ভাষায় লেখা ১৪ পাতার একটি চিঠি অনুবাদ করে, ভয়েস অফ আমেরিকার সাংবাদিকরা ‘এর জবাব পাবার চেষ্টা করেছেন। সাংবাদিকদের এই দল এই তরুণের কিছু বন্ধু ও সহযোগি এবং অন্যান্য সুত্রের ও সাক্ষাৎকার নেয়। সংক্ষেপে কথা বলে তার বাবার সঙ্গেও।

তোরাল কিন্তু জিহাদের পথ ধরে এগোয়নি। তার স্বভাবসুন্দর রসবোধ, অনুসন্ধিৎসা এবং বুদ্ধিমত্তায় এ রকম কোন আভাসই পাওয়া যায়নি। তার জীবন ও মৃত্যু ভ্রান্তিতে হারিয়ে যাওয়া মুসলিম তরুণদের একটি বিয়োগান্তক বাস্তব ঘটনাই তুলে ধরছে যারা আই এস ‘এর আদর্শের মিথ্যে মর্যাদায় বিভোর থেকেছে।

Raised in devout family

ধর্মভীরু পরিবারে বেড়ে ওঠা তিন ভাই\-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়জন তোরাল আঙ্কারার সিনকান জেলায় এমন এক পরিবারে বেড়ে ওঠে যারা একাধারে শিক্ষা ও ধর্মকে মূল্য দিয়েছে। তারা বাবা তুর্কি সাহিত্যে পিএইচডি ডিগ্রিধারী ব্যক্তি এবং তিনি সেখানকার কলেজের শিক্ষক। তার বড় ভাই সফ্টওয়েয়ার ইঞ্জিনিয়ার যিনি সুরকারও বটে। তার ছোট বোন ছাত্রী এবং একজন চাচা গণিতের অধ্যাপক।

তোরালের বাবা সুলেইমান তোরাল ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইসলাম সম্পর্কে ব্লগ লেখেন, কবিতা প্রকাশ করেন এবং তার রক্ষনশীল দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি, “The Value System in Quran” শীর্ষক তাঁর ডক্টরেট থিসিস সংযুক্ত করেন। সেখানে তিনি জঙ্গি জিহাদকে সমর্থন করেন এবং আল্লাহ এবং তাঁর নবীতে বিশ্বাস না করার জন্য ইহুদি ও খ্রীষ্টানদের অভিশাপ দেন।

তিনি লেখেন, “তাদের জন্য অপেক্ষা করছে প্রচন্ড শাস্তি”।নি এবং তাঁর গৃহিনী স্ত্রী রশিদকে, ব্যক্তিগত ভাবে পবিত্র গ্রন্থ পাঠের জন্য হাই স্কুলে ভর্তি করান।

উপরে: তোরাল তুরস্কের আনাতালিয়া TUBITAK জাতীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ছায়াপথ এবং চন্দ্র অস্ত যাবার দৃশ্যের ছবি তুলে পোস্ট করে ১২ই অক্টোবর ২০১৪ সালেসঙ্গে আছে তুরস্কের আনাতালিয়া TUBITAK জাতীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে নক্ষত্র উৎসব উপলক্ষে তোলা আকাশের ছবি, পোস্ট করা হয় ১২ই অক্টোবর ২০১৪। 

উপরে: তোরাল তুরস্কের আনাতালিয়া TUBITAK জাতীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ছায়াপথ এবং চন্দ্র অস্ত যাবার দৃশ্যের ছবি তুলে পোস্ট করে ১২ই অক্টোবর ২০১৪ সালে


সঙ্গে আছে তুরস্কের আনাতালিয়া TUBITAK জাতীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে নক্ষত্র উৎসব উপলক্ষে তোলা আকাশের ছবি, পোস্ট করা হয় ১২ই অক্টোবর ২০১৪। 

চ্ছৃঙ্খল “ প্রতিভা”

২০০৭ সালের শেষের দিকে তোরাল পদার্থ বিদ্যা পাঠে, তুরস্কের হার্ভার্ড নামে পরিচিত Middle East Technical University (METU)’তে ভর্তি হন। তার একজন সাবেক সহপাঠি নিহাল চেলিক বলেন এই ধর্ম নিরপেক্ষ ক্যাম্পাস ছিল তার বাড়ির জীবনের বিপরীত। চেলিক হচ্ছেন তার বিভিন্ন সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম যিনি তোরালের লেখা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া তাঁর পোস্টের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

চেলিক বলেন “দিনের বেলায় মুক্ত পরিবেশেই সে স্কুলে যাচ্ছিল। তবে রাতের বেলায় সে তার পরিবারের সঙ্গে রক্ষনশীল ও ধর্মীয় পরিবেশেই সময় কাটাতো। একই পাত্রে জীবনের প্রতি এই দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে মেশানো যায় না।

তুরস্কের আনাতালিয়ায় এক পাহাড়ি হাঁটা পথে তোরালের অভিযান। 

তুরস্কের আনাতালিয়ায় এক পাহাড়ি হাঁটা পথে তোরালের অভিযান। 

METU ‘তে তোরাল জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং ছবি তোলার জন্য এবং কখনও কখনও তার তালগোল পাকানো উদ্ভট ভাড়ামির জন্যও পরিচিত ছিল। নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ করতে চাননি এমন একজন অধ্যাপক বলছেন, “সে একজন তীক্ষ্ণধী ব্যক্তি ছিল সে খুব ভাল ভাল প্রশ্ন জিজ্ঞেষ করতো”। তবে তোরাল যে সব চেয়ে ভাল ছাত্র ছিল তা নয় কারণ তার মধ্যে শৃংখলা ছিল না এবং সে অনেকগুলো ক্লাসেই অনুপস্থিত থাকতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যা ক্লাবের নেতা উৎকু বরাটাচের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, তোরাল ঐ ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করে। তারা দু জন মিলেই ক্যাম্পিং সফরে রাতের আকাশ নিয়ে গবেষণা করে। বরাটাচ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলে TÜBİTAK National Observatory’র নক্ষত্র দেখার বার্ষিক উৎসবে সাহায্য করে।

তোরাল তার জ্যোতির্বিজ্ঞানের ছবিগুলো ২০১০ সালে National Geographic member page এ অর্থাৎ ন্যাশনাল জিওগ্র্যাফিক সদস্য পাতায় প্রকাশ করে এবং হাবল স্পেস টেলিস্কোপে নেয়া ছবিগুলো গ্রহণ করতে ২০১২ সালে সে ন্যাসার চিত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তখন সে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছদ্ম নাম হিসেবে Nükleer Kedi মানে পারমানবিক বিড়াল এই নামটি গ্রহণ করে। তাতে বিড়াল এবং বিড়ালের ছবি যে তার কাছে প্রিয় সেটাই যেন স্বীকৃতি পায়।

এই ছবিটি তোরাল ৮ই অক্টোবর ২০১৪ সালে ফেইসবুকে প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল, “পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়া”

এই ছবিটি তোরাল ৮ই অক্টোবর ২০১৪ সালে ফেইসবুকে প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল, “পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়া”

এক ‘উন্মাদ’ অননুবর্তী

তোরালের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাবার আশঙ্কায়, নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ করেছেন তার এক সহপাঠি। তিনি বলছেন যে বেশ মজার এবং বেশ অদ্ভূত লোক ছিলো এই তোরাল, “কৌতুক করতো এবং সব কিছু নিয়েই ঠাট্টা করতো। সহপাঠি বলছেন “একবার সে ক্লাসে এসছিল টাইটস পরে”। আরেকবার এলো খালি গায়ে, হাফ প্যান্ট পরে।

একজন উৎসুক সাইকেলচালক, হাইকার এবং সাঁতারু তোরাল শারিরীক কসরতে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। তার এই সহপঠি স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে বলছেন , একবার সে একঘেয়েমি কাটাতে সাইকেল চালিয়েই তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা থেকে দক্ষিণের শহর কোনিয়া পর্যন্ত ২৬২ কিলোমিটার অর্থাৎ প্রায় ১৬৩ মাইল অতিক্রম করে।

উপরে: ওডিটিইউ জ্যোতির্বিজ্ঞান ক্লাব ২০০৯ সালে একটি ভিডিও তৈরি করে যেখানে সদস্যরা বিশ্বকে বর্ণনা করেন। একটি উদ্ধৃতিতে তোরালের কথা এসেছে। 

অতিথি\-আবাসের ওয়েবসাইট Couchsurfing ‘এ তোরাল লিখেছিল, “যাদেরকে আমি জানি তাদের বেশির ভাগ লোকই বলবে যে আমি পাগল কিন্তু তারা আবার আমার মতো হতে চায় কারণ আমি সাধারণত তাই\-ই করি, যা আমি করতে চাই। আমার ঐ সাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা হয়ত সে রকমই”।

“আমি হাসি এবং লোকজনকে হাসাই (যদি আমি কখনও কখনও কাঁদিও। আমার আশপাশের লোকজন বেশির ভাগ সময়ে এক ঘেয়েমি বোধ করে না”।

উগ্রবাদের দিকে পায়ে পায়ে এগুনো

METU তে তোরাল একজন ধর্ম-পালকারী মুসলমান ছিল তবে মুক্ত ভাবে তাদের সঙ্গেও মিশতো যাদের ঠিক নামাজ পড়া, রোজা রাখা কিংবা মদ পান এড়িয়ে চলায় কোন আগ্রহ ছিল না।

উগ্রবাদিদের লক্ষ্যবস্তু যাতে না হন, সে জন্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার আরেক বন্ধু বলে, “একদিন আমরা সবাই মদ পান করছিলাম। তোরাল আমাদের সঙ্গে মদ খায়নি কিন্তু মদ না খাওয়ার জন্য সে নিজেকে নিয়ে নিজেই ঠাট্টা করে।

২০১৩ সালে সে সরকার বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নেয় এবং সব কিছু বোঝার জন্য সে নিজের বিশ্বাসের প্রতি আরও অনুগত হয়ে পড়ে। জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার বন্ধু বোড়াটাচ বলেন, সে আস্তে আস্তে বদলাতে থাকে। তোরাল ক্রমশই নিজেকে METU’‘র ধর্মনিরেপক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠদের থেকে দূরে সরিয়ে আনে। আই এস ‘এর রীতি অনুযায়ী সে দাড়ি রাখে এবং চুল কাটা বন্ধ করে দেয়। তিনি ফেইসবুকে লেখেন, “আপনার ভাইদের কপালে কপাল ঠেকিয়ে যখন আপনি তাদের স্বাগত জানান তখন METU’তে কমিউনিস্টরা তখনই জড়ো হয়ে হাটতে থাকে”।

উপরে: আঙ্কারায় Middle East Technical University মসজিদে মগরিবের নামাজের পর, নামাজিরা খাবার অপেক্ষায় আছেন, ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (METU কমিউনিটি মসজিদের সৌজন্যে প্রাপ্ত) তুরস্কের আন্তালিয়ায় নক্ষত্র-খোচিত আকাশের প্রেক্ষাপটে তোরাল ÜBİTAK ‘এর জাতীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ছবি তোলেন। ছবি পোস্ট করা হয়: ২৬শে অক্টোবর ২০১৪


উপরে: আঙ্কারায় Middle East Technical University মসজিদে মগরিবের নামাজের পর, নামাজিরা খাবার অপেক্ষায় আছেন, ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (METU কমিউনিটি মসজিদের সৌজন্যে প্রাপ্ত) 

তুরস্কের আন্তালিয়ায় নক্ষত্র-খোচিত আকাশের প্রেক্ষাপটে তোরাল ÜBİTAK ‘এর জাতীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ছবি তোলেন। ছবি পোস্ট করা হয়: ২৬শে অক্টোবর ২০১৪

সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ সমাজের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটাতো এবং বহু ঘন্টা ধরে কোরান নিয়ে, “আয়াতের পর আয়াত, শব্দের পর শব্দ নিয়ে আলোচনা করতো”। বরাটাচ বলেন “এক সময়ে সে ইসলাম নিয়ে ফেইসবুক পোস্ট দেন এবং আমি আলোচনা শুরু করার লক্ষে মন্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু সে এতে কোন সাড়া দেয়নি”।

চেলিক, যিনি নিজেও জ্যোতির্বিজ্ঞান ক্লাবে ছিলেন তিনি বলেন, “কখনও কখনও দিনের পর দিন, এমন কী সপ্তা দুয়েক জুড়ে সে মসজিদে থেকেই কোরানের আয়াত নিয়ে নিমজ্জিত থেকেছে”। তিনি তাঁর বন্ধুর এই উগ্রবাদে রূপান্তরণের জন্য অংশত মসজিদের ঐ স্টাডি গ্রুপে তার অংশগ্রহণই দায়ি। চেলিক বলেন, ২০১৪ সালের বসন্ত নাগাদ, “ঐ গ্রুপ থেকে আরও একজন সিরিয়া কিংবা ইরাকে চলে যায়। আমরা জানিনা তার কি হলো”।

জিহাদিদের দলে ভর্তির ব্যাপারে নিউজ উইকে ২০১৫ সালের একটি লেখায় (Newsweek, in a 2015 article) তোরালকে উল্লেখ করে বলা হয় যে মসজিদের স্টাডিগ্রুপের একজন সাবেক সদস্য আই এস এ যোগ দিয়েছে এবং তোরালকে অনলাইনে জিহাদি ভিডিও দেখাতো। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যখন তুরস্কের সরকার সিরীয় সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশি যোদ্ধাদের নিয়ে ব্যস্ত তখন আই এস ‘এর সমর্থনপুষ্ট তুর্কিরা সকলের নজর এড়িয়ছে।

তোরাল তার বাগ্মিতার গুণে মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে ইমামতি করতো। METU ‘র পদার্থ বিভাগের একজন রিসার্চ অ্যাসিস্টেন্ট উফুক তাস্তান তুরস্কের বীরগুন দৈনিককে বলেন যে তাঁরা একত্রেই পড়াশোনা করেছেন।
তার পর তোরাল প্রকাশ্যেই জিহাদের পক্ষে তার সমর্থন জানানো শুরু করে। ফেইসবুকে সিরীয় অসামরিক লোকজনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে। তার মতে তারা নিহত হয়েছে রুশ, সিরীয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের নের্তৃত্বদীন জোটের বিমান আক্রমণে। সে তুরস্কের সরকার এবং সমাজেরও নিন্দে করে।

চেলিক বলেন, “বিভিন্ন সময়ে সে দূর্নীতি ও উৎকোচের জন্য সরকারের সমালোচনা করেছে”। সে আরও মনে করতো যে রেজেপ তাইপ এরদোয়ানের সরকার ইসলামকে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করেছে।

ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা

২০১৪ সালের বসন্তকালে তোরাল METU থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ঐ একই বছর হেমন্তকালে সে ফিনল্যান্ডের Jyväskylä বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় মাস্টার্সে ভর্তি হয়।

ভুগোল ও জলবায়ুর এই নাটকীয় পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে সে তার ফেইসবুকে লিখেছিল, “অবশ্যই আমার বর্তমান ক্যাম্পাস আগেকার চাইতে অনেক ভাল”। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোরাল ছবি পোস্ট করে এবং ঐ নর্ডিক দেশটির বর্ণিল হেমন্তকালে সানন্দে বিস্ময় প্রকাশ করে। সেই সঙ্গে সে বিড়াল, কাঠবিড়ালি এবং অন্যান্য পশুর ছবি ও পোস্ট করে।

ফিনল্যান্ডের কোলারি এলাকার আকাসলোম্পলো গ্রামের নয়নাভিরাম দৃশ্যের ছবি তুলেছে তোরাল। পোস্ট করেছে: ২৬শে ডিসেম্বর, ২০১৪। সাথের ছবি: তোরাল ফিনল্যান্ডের একটি জাতীয় পার্ক ইলাসের ওপর “নর্থান লাইটস” এর ছবি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করেছে ২৭শে ডিসেম্বর, ২০১৪ 


ফিনল্যান্ডের কোলারি এলাকার আকাসলোম্পলো গ্রামের নয়নাভিরাম দৃশ্যের ছবি তুলেছে তোরাল। পোস্ট করেছে: ২৬শে ডিসেম্বর, ২০১৪। 

সাথের ছবি: তোরাল ফিনল্যান্ডের একটি জাতীয় পার্ক ইলাসের ওপর “নর্থান লাইটস” এর ছবি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করেছে ২৭শে ডিসেম্বর, ২০১৪ 

এই সময়ে তোরাল লেখা পড়ার দিকে অতখানি মনোযোগী ছিল না। সে বরঞ্চ ইভাসকিলা শহরের আন নুর মসজিদের দিকেই আকৃষ্ট ছিল বেশি। তার সঙ্গে একই বাড়িতে বাস করতেন এমন একজন ব্যক্তি আনবু পোসাক্কান্নু তুরস্কের বীরগুন দৈনিক সংবাদপত্রকে বলেন, “ সে ক্লাসে যোগ দিত না তবে অধিকাংশ সময়ে মসজিদে কাটাতো আর বাড়িতে থাকলে ইন্টারনেটে ব্যস্ত থাকতো।

পোসাক্কান্নু বলেন তোরাল “প্রায়ই বলতো সে ইসলামিক স্টেট যোগ দিতে চায়”।

ভয়েস অফ আমেরিকা পোসাক্কান্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ হয়নি। METU তে তোরালের জ্যোতির্বিজ্ঞানের সেই বন্ধু বরাটাচ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন সে তার নিজের দাড়ি নিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে ঠাট্টা করতো।

“আমি ঠাট্টা করেই তাকে জিজ্ঞষ করেছিলাম এই চেহারায় তারা কি ভাবে তোমাকে ফিনল্যান্ডে ঢুকতে দিল? তারা জানতে চায়নি যে তুমি জিহাদে যাচ্ছো কি না”? স্মরণ করলেন বরাটাচ। বরটাচ জানাচ্ছেন সঙ্গে সঙ্গে তোরাল জবাব দেয়, “তারা উদ্দেশ্য অনুযায়ী মানুষকে বিচার করে, সে কেমন দেখতে তা দিয়ে নয়”।
কিন্তু বীরগুন দৈনিকের মতে এই গ্রাজুয়েট ছাত্রের উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত সন্দেহের জন্ম দেয়। ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ২০১৪ সালে তদন্ত কাজ শুরু করেন বলে ঐ সংবাদপত্রটি জানায়। তোরাল সম্পর্কে নিউজউইকের প্রতিবেদনে আরও জানা যায় যে পুলিশ “তার ফেইসবুক পোস্টে শঙ্কিত হয়ে” তোরালকে ক্যাম্পাসের বাইরে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

মসজিদের প্রেসিডেন্ট খালিদ বেলামাইন ভয়েস অফ আমেরিকাকে এটা নিশ্চিত করেন যে ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তা কর্মীরা তোরালের ব্যাপারে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে বেলামাইন বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে তোরালের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি এবং এখানকার এই সমাজে তাকে কেউই চিনতো না”।
বেলামাইন আরও বলেন, “ আমরা যা লক্ষ্য করেছি তা থেকে বলতে পারি যে সে বেশ রাত করে মসজিদে আসতো এবং কারও সঙ্গে কথা বলতো না। যদি আমি তার সম্পর্কে কোন রকম সন্দেহ করতাম স্পষ্টতই আ্মি তা জানাতাম”।

উপরে: দক্ষিন ফিনল্যান্ডের আকাসলোম্পোলোর এই 7 Fells Hostel এ তোরাল আসে। 


উপরে: দক্ষিন ফিনল্যান্ডের আকাসলোম্পোলোর এই 7 Fells Hostel এ তোরাল আসে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালিন ছুটির সময়ে ফিনল্যান্ড ত্যাগ করার আগে তোরাল তার ডিএসএল আর ক্যামেরা নিয়ে যান হেলসিঙ্কি গির্জায় এবং ল্যাপল্যান্ড এলাকায় 7 Fells Hostel এ। ফেইসবুকে সে লিখেছে এর কারণ এর মালিকও, “আমার মতোই একজন অভিজ্ঞ চিত্রগ্রাহক”।

ফিনল্যান্ডের একটি ইভানজিলিকাল লুথেরান, গির্জা, হেলসিঙ্কি ক্যাথেড্রাল থেকে বেরিয়ে আসছে তোরাল, ১৭ই ডিসেম্বর ২০১৪

কৌশল ও পলায়ন –

তোরাল আঙ্কারায় তার বাড়িতে গিয়ে সেটাকেই জিহাদে আরো নিবিড় ভাবে প্রবেশের পথ হিসেবে ব্যবহার করে। সে তার বাবা-মাকে বলে যে সে METU. তে তার বন্ধুদের সঙ্গে ১০ই জানুয়ারি (২০১৫) রাত কাটানোর পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু সেখানে না গিয়ে সে পিঠে হাল্কা ব্যাগ নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়।

তোরাল পরে লেখে, “যাবার আগে আমি আল্লাহর উপর ভরসা রাখি”।
সে কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও পথে কোন মিনিবাস থামিয়ে সিরিয়ার পথে সে রওয়ানা দিল। সে লিখল, বাসে উঠে, “ আমি উপলব্ধি করলাম, আমি আমার ক্যামেরা ভুলে গেছি”। এই ক্যামেরা সে প্রায় সব জায়গাতেই নিয়ে গেছে, আকাশরে ছবি তুলেছে, তার আশপাশের এবং তার নিজের বিবর্তনেরো ছবি তুলেছে। তবে এই ক্যামেরা আনতে ভুলে যাওয়াটা, তার মতে, “ কোন বড় ব্যাপার নয়”।

সিরিয়ায় প্রবেশ\-

এই স্মৃতিচারণ এবং তার পর কী হয়েছিল কার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় তোরালের দীর্ঘ চিঠিতে। সেগুলও ছোট ছোট ভাগে লেখা হয়। সে সময়ে সিরিয়ায় ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম তার নাগালের বাইরে ছিল। ঐ চিঠির শিরোনাম “খেলাফতের ভূমি থেকে শুভেচ্ছা”। এই চিঠি সে ফেইসবুক লিঙ্কের মাধ্যমে প্রকাশ্যে পোস্ট করে ২৫শে মার্চ, ২০১৫।

তুরস্কের দক্ষিণ পুর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর সানলিউর্ফাতে সে তিউনেশিয়া, লিবিয়া এবং সৌদি আরব থেকে আসা লোকজনের সংস্পর্শে আসে যারা ইসলামিক স্টেটের পক্ষে যুদ্ধ করতে চেয়েছিল। একত্রেই তারা অবৈধ ভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়ায় প্রবেশ করে। তোরাল নিজের প্রশংসা করে বলে, “অনেকক্ষণ ধরে আমরা দৌঁড়ালাম। তবে আমি যে ভারি স্যুটকেইস আনিনি, সেটা বেশ ভালোই করেছিলাম”।

এক লম্বা চুলওয়ালা আফগান আই এস সদস্য এ সব লোকদের একত্রে গাড়িতে নিয়ে, বিশাল এক কালো রঙের আই এস পতাকা পেরিয়ে সিরিয়ার তাল আবইয়াদ শহরের দিকে রওয়ানা দিল। তাদের একটি বাড়িতে প্রবেশ করলো। সেখানে শুধু মাত্র মোমবাতির আলো জ্বলছিল। তাদের পাসপোট, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি এবং সব কিছুই তারা নিয়ে নেয় তবে তোরাল তার পরিবারের কাছে ইমেইল পাঠানোর জন্য কয়েক মিনিটের জন্য ফোন ব্যবহার করতে একজন আই এস যোদ্ধাকে রাজি করায়।

সে লেখে, “খারাপ কানেকশানের জন্য ইন্টারনেটে সংযুক্ত হওয়া খুব সমস্যার ব্যাপার ছিল”। সে জানায় সব কয়টি ইমেইল পাঠানোর আগেই তার ফোন জব্দ করে নেওয়া হয়। “আমি কোথায়ই বা যাচ্ছি? নিজেই ভাবনায় পড়ে গেলাম, কিন্তু যাইহোক....”।

আই এস নবাগতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং সবাইকে নতুন একটা ডাক নাম দেয়। তোরাল লেখে, “আমার নাম দেয় আবু হুরায়রা” যার মানে হচ্ছে বিড়ালের বাবা।

ইসলামিক স্টেটের স্বঘোষিত রাজধানী সিরিয়ার রাক্কায় বালুঝড়ের সময়ে তোরাল তার মুখের বেশির ভাগ ঢেকে রেখেছে। ৬ই ডিসেম্বর ২০১৫। 

ইসলামিক স্টেটের স্বঘোষিত রাজধানী সিরিয়ার রাক্কায় বালুঝড়ের সময়ে তোরাল তার মুখের বেশির ভাগ ঢেকে রেখেছে। ৬ই ডিসেম্বর ২০১৫। 

ভ্রাতৃত্ব ও বিরক্তি\-

সে লিখেছে, কয়েকদিন পর তাকে অন্য একটি বাড়ীতে সরানো হয় যেখানকার দেয়ালে দেয়ালে বুলেট ঝোলানো যা সম্ভবত যুদ্ধক্ষেত্রে লুট করা। সেখানে প্রায় ২০ জনকে আটকে রাখা ছিল। তুঘরিল খেয়াল করেছিল তাদের মধ্যেকার ভিন্নতা এবং আইএসের সহযোগিতার মনোভাব। তাদের একজন ছিল জার্মানীর পেশাদারী মুষ্টিযোদ্ধা। অন্য একজন ছিল বাংলাদেশ থেকে আসা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। একজন ফরাসী জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সরাসরি আসে। একজন চীন থেকে ১৫ হাজার ডলার খরচ করে আসে।
আরো কয়েকদিন পর তুঘরাল ও আরো ৮ জনকে মিনিবাসে করে আইএস ঘোষিত রাজধানী শহর রাক্কায় পাঠানো হয়। “জান্নাতে দেখা হবে”, বলে অন্যদের কাছ থেকে বিদায় নিতে হয় তাদেরকে।

আইএস এর যোদ্ধা হয়ে ওঠার জন্যে তুঘরাল রাক্কায় শরিয়া শিক্ষা ও ফিটনেস প্রশিক্ষন নেয়ার অপেক্ষায় থাকে। সে বলেছে, “শহরটি খুব বড় ও জনবহুল\- মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্থ”। তার চিঠিতে আরো লিখেছে, “ইসলামিক ষ্টেটের সবচেয়ে সুন্দর দিক হচ্ছে সর্বত্র ধুমপান বন্ধ করা”। তবে সে অভিযোগ করে বলেছে মোটর সাইকেল এবং হিটারে ডিজেল পোড়ানোটা খারাপ।

চিলির এক শিক্ষানবীশ যোদ্ধার সঙ্গে রাক্কায় তুঘরাল দুই সপ্তাহ কাটায়। ডিম এবং অন্য কিছু খাবার দেয়া হতো তাদেরকে। তার একবার গলা ব্যাথা হল। সেই ব্যাথাকে সে তুলনা করে সেখানে চলমান বিমান হামলার সঙ্গে। ঐসব হামলায় বাড়ী ঘরের দরজা জানালা বিধ্ধস্থ হয়। যেনো ভয়াবহ জোরে বাতাস বয়ে যাচ্ছে; প্রতি মুহুর্তে মাথার ওপর বোমা পড়ার ভয়”।

যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি

কয়েকমাস পর তোরালকে রাক্কার মধ্যে এবং কাছাকাছি স্থানের কয়েকটি বাড়ীতে রাখা হয় এবং পরে নেয়া হয় হমসে। সেখানে থাকার অবস্থা ভালো ছিল না এবং ঠান্ডা, জনবহুল ও অপরিস্কার বলে সে অভিযোগ করে। চিঠিতে সে লেখে, “আমরা প্রায় ৩০ জন ছিলাম; সবাইকে এক ঘরে ঘুমাতে হতো এবং আরো লোক আনা হতো”।

এক সময় সেই ঘরটিতে স্পঞ্জের বিছানা করা হয়, ওয়াশিং মেশিন, ও পাওয়ার জেনারেটর রাখা হয়। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে লুট করা বহু জিনিস ছিল সেই ঘরে। জাতিসংঘের লেবেল দেয়া কম্বল ছিল তার মধ্যে যা শরনার্থীদের দেয়ার জন্য আনা।

তোরালের শারিরিক প্রশিক্ষন শুরু হয় ঐ ঘরে প্রথম দিন থেকেই। ব্যাঙ-লাফ, কাদার মধ্যে চলা সহ নানা ধরনের প্রশিক্ষন দেয়া হয়। নতুনদের উদ্দ্যেশ্যে সে লিখেছে, ফিনল্যান্ড থেকে আনা একটি জ্যাকেট ও প্যান্ট পরা ছিল তার। তা পরে সে কাদার মধ্যে প্রশিক্ষন নিতে চাইনি প্রথমে। কিন্ত করতে হয়েছে। নতুনদের পরামর্শ দিয়েছে এমন পোষাকের যাতে অস্ত্র লুকানো যায়।

ঐ গুহায় তার সাথে শিক্ষানবীশ যারা ছিল তাদের মধ্যে এক বৃটিশ সিভিল ইঞ্জিনায়ার ও তার ছেলে ছিল। সে লিখেছে, “নক্ষত্র সম্পর্কে তারা জানতো। তবু আমি তাদের সঙ্গে তা নিয়ৈ কথা বলা শুরু করি। গুহায় বিদ্যুৎ থাকলেও বেশিরভাড় শহরে ছিল না। আলর দুষন তারার আলো কমতো না।
“আমি বলতে পারি যে ইসলামিক ষ্টেটের সর্বত্রই আকাশ পরিস্কার”।

আকাশ ভীতি

প্রায় সব জায়গাতেই নতুন ভর্তি হওয়া আইএস যোদ্ধারা বিমান হামলার আশঙ্কায় থাকতো। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের বিমানগুলো আমাদের উপর থেকে রোজই উড়ে যাচ্ছিল। বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত একটি বোমা এতোটাই কাছে বিস্ফোরিত হয় যে তার শব্দে আমাদের বধির হবার অবস্থা এবং এর ফলে আমাদের পাশেই একটা বিরাট গর্ত হয়ে গেল”।

গুহা মানবের মতো বাস করতে করতে তোরাল ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। সে ইসলামিক স্টেটের সমসাগুলো ও স্বীকার করে : বাজে পয়ঃব্যবস্থা, বাজে ব্যবস্থাপনা এবং কোন কোন নতুন নিযুক্ত লোকজনের উদ্দেশ্য ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সে লিখেছে, মলদোভা থেকে ভর্তি হওয়া একজন যে কীনা আগে আলক্বায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আল নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে ছিল “আমাকে বলে যে কোন কোন মুজাহিদিন পার্থিব লাভের লোভে আসে কারণ তারা ইসলামিক স্টেট থেকে ভালো পয়সা এবং আবাস স্থল পায়”।

তারপর ও তোরাল একটি ইউটোপীয় ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে থাকে।

সে লিখেছে , “ ইসলামিক ষ্টেট একটি চমৎকার ষ্টেট নয়। হ্যা এটি একটি ইসলামিক ষ্টেট তবে এখানে মানুষের ভুলগুলো ষ্টেটর ভুল নয়”। “এখানে সবকিছু ঠিকঠাক নয়। পরিচ্ছন্নতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়না। ট্রাফিক আইন মানা হয়না। অভিবাসিদের সহায়তায় আমরা ধাপে ধাপে সেগুলো ঠিক করবো” বিদেশী যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলা একটি কথা।

সিরিয়ার রাক্কায় আইএস যোদ্ধার সঙ্গে তোরাল (বায়ে); ৯ই জুলাই ২০১৫সঙ্গী: সরকারী বাহিনী ও ইসলামিক ষ্টেট জঙ্গীদের যুদ্ধে সিরিয়ার শহর ডিয়েরেজজোর ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে, তোরাল ফেসবুকে তার একটি ছবিতে লিখেছে; ৯ই আগষ্ট, ২০১৫

সিরিয়ার রাক্কায় আইএস যোদ্ধার সঙ্গে তোরাল (বায়ে); ৯ই জুলাই ২০১৫


সঙ্গী: সরকারী বাহিনী ও ইসলামিক ষ্টেট জঙ্গীদের যুদ্ধে সিরিয়ার শহর ডিয়েরেজজোর ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে, তোরাল ফেসবুকে তার একটি ছবিতে লিখেছে; ৯ই আগষ্ট, ২০১৫

যুদ্ধ শুরু

গুহায় প্রায় একমাসের পর সে এবং আরো ৫ নতুন যোদ্ধাকে কমান্ডো হিসাবে বাছাই করা হয় এবং আইএস যোদ্ধাদের একটি দলে যোগদানের আহবান জানানো হয়।

তোরাল বলেছে-“অবস্থা হঠাৎ বদলে যায়। হমসের বাইরে, কমান্ডোরা একটি বাড়ীতে যায়। প্রত্যেককে একটি নতুন কম্বল দেয়া হয়। তাদের তাজিক রান্নার ধরনটা ছিল অনেকটা আমাদেরই মতো। প্রতি সপ্তাহে একটি করে ভেড়া জবাই দিয়ে সেই মাংস রান্না হতো। প্রায় দৈনিকই কলা ও কমলা দেয়া হতো। আমাদেরকে তিন থেকে চারটি স্নিকারর্স ক্যান্ডি বার দেয়া হতো প্রতিদিন”।

প্রথম যুদ্ধে তোরালকে ওষুধ সরবরাহ ও স্বাস্থ্য সেবার দায়িত্ব দেয়া হয়- ফাষ্টৃ এইড ট্রেনিং হিসাবে যা সে মেটুতে নিয়েছিল। “আমিই সেখানে ডাক্তার’; সে লিখেছে। “কারো খুব সামান্য স্বাস্থ্য সেবার জ্ঞান থাকলেও তা সেখানে কাজে লাগে”।

সে বলেছে, “সেই প্রথম আমি কাছ থেকে গুলির শব্দ শুনি; ব্যাং ব্যাং। ট্যাংক ও আর্টিলারির শব্দ শুনে ভয়ে আমি এবং অন্যেরা পাহাড়ের গুহায় লুকাতে শুরু করি”। কয়েক ঘন্টা ঠান্ডা বাতাস ও বৃষ্টির পর সে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পায়। শিবিরটি একটি হাসপাতালের রূপ নেয় এবং সেখানে দুটি মৃতদেহ ও আহত ছয় জনকে রাখা হয়। সে লিখেছে, “সর্বত্রই ছিল রক্তের গন্ধ”।

বর্বরতাকে সমর্থন করা

আরেকটি রাত্রির লড়াইএর পর, তোরাল এবং তার সঙ্গী জিহাদিরা সে তার চিঠিতে লিখেছে ‘সাফল্যের সঙ্গে’ তাদের ঘাঁটিতে ফিরে এলো। ওই যুদ্ধের অংশ হিসেবে পাওয়া দুটি ট্যাংক, সেইসঙ্গে একটি ছোট ট্রাক, কয়েকটি রকেট চালিত গ্রেনেড এবং ‘তিনটি কাটা মাথা’ নিয়ে এলো।

পরে সে জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার তুর্কী বন্ধু বোরাটাকের সঙ্গে ফেসবুক বিনিময়ে আইএস-এর গলাকাটার পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরে। সে তাকে প্রশ্ন করেছিল, তোরাল কেন ‘একটি গ্রুপ যারা নিরাপরাধ মানুষকে জবাই করে এবং তাদের মাথা কেটে ফেলে তাদের সঙ্গে জড়িত?

এটাতো তোরাল এর জবাবে বলে, এ হচ্ছে সিরিয়ার শাসকগোষ্ঠিকে সমর্থন করার বিরুদ্ধে এক শাস্তি, ‘যারা অসংখ্য নিরাপরাধ সাধারণ মানুষজনকে খুন করেছে’ এবং যারা ইসলামের কর্তৃত্বকে নাকচ করেছে, ‘যারা আমেরিকার ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে।’ সে একইভাবে আই এস জিহাদি, যারা মহিলাদের যৌনদাস হিসেব ধরে নিয়ে যাচ্ছে, যাদের বেশীরভাগ ইয়াযিদি ধর্মীয় সংখ্যালঘু তাদেরও সমর্থন করে।

সে বোরাটাককে বলেঃ গলাকাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হাসিল করে – এ হচ্ছে টিভিতে দেখিয়ে শত্রুকে ভয় দেখানোর জন্য। তারা যখন তা দেখবে তারা আমাদের ভয় পাবে এবং পালিয়ে যাবে।’

এক জিহাদি বধু

২০১৫ সালের প্রথমার্ধের কোন এক সময়ে, তোরাল সীমান্তবর্তী শহর তাল আবিয়াদে কুর্দী যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জখম হয়। সে তখন আরোগ্যলাভের জন্য রাকায় চলে যায়।

ছবি: আহত তোরাল উত্তরাঞ্চলীয় সিরিয়ান শহর তাল আবিয়াদে চিকিৎসারত অবস্থায়।  ছবিটি ২০১৫ সালের ১৭ই এপ্রিল পোস্ট করা হয়

ছবি: আহত তোরাল উত্তরাঞ্চলীয় সিরিয়ান শহর তাল আবিয়াদে চিকিৎসারত অবস্থায়। ছবিটি ২০১৫ সালের ১৭ই এপ্রিল পোস্ট করা হয়

এর পরের মাসে সে আইএস\-এর এক মহিলা সমর্থক আয়শা জেভরা এত\-তুর্কীকে বিয়ে করে, সেও তুরস্কের।

আগের সে ফেসবুকে লিখেছিল যে অবিবাহিত জিহাদিরা মাসে ১শো ডলার বেতন পায় এবং অন্য ৬জন যোদ্ধার সঙ্গে একটি বাড়ীতে থাকে। বিদেশী যোদ্ধাদের চার মাসের মধ্যে বিয়ে করতে হয়….ইসলামিক স্টেট তাদের একটি বাড়ী দেয় সেইসঙ্গে স্ত্রী ও ছেলেমেয়দের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়।’

বিয়ের পর তোরাল নাটকীয়ভাবে সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ কমিয়ে দিল। বোরাটাক ফেসবুকে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো কেন সে নীরব, এবং সে তাকে তুরস্কে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রাজী করানোর আশা করে।

‘সে বলে সবে বিয়ে করেছে এবং তার স্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে তাকে বেশী সময় ব্যয় করতে দেখলে ঈর্ষান্বিত হয়।’ বোরাটাক ভিওএকে বলে, ‘আমি জানিনা সে ঠাট্টা করছিল না কি সত্যি কথাই বলছিল।’

তোরাল এর পরের ফেসবুক আর টুইটারের লেখায়, যদিও তা কমই ছিল, সেখানে তার রাডিকাল জিহাদের আকাঙ্খা আর কথা জানায়। সে সিরিয়া, রাশিয়ান আর যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত বিমান আক্রমণের প্রতিবাদ জানায় – সাধারণ মানুষের মৃত্যুর প্রতিবাদ জানায়। সে শারিয়া আইন মোতাবেক সবকিছু করার কথা বলে, ‘একেবারে খাওয়া থেকে নিয়ে শৌচাগারে যাওয়া পর্যন্ত।’

সে সিরিয়া আরবদের সমালোচনা করে, যারা সে যেমন তার ফেসবুকে বলে, সঠিকভাবে কোরান তলাওয়াত করতে জানেনা অথবা সঠিকভাবে ইসলামী রেওয়াজে সম্বোধন করতে পারে না ঃ‘আমি যখন রাকায় সাধারণ মানুষজনকে বলি আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, তারা জবাবে বলে, হ্যালো, হ্যালো।’ আমি একেবারে অতিষ্ঠ।’

অবিশ্বাসীদের জন্য, দোযখের ছাড়পত্র

অতীতের তোরাল, যে কিনা বিজ্ঞানের নেশায় মগ্ন ছিল, সে সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়নি। সে মাঝে মধ্যেই তার পুরানো জ্যোতির্বিজ্ঞানের ছবি নতুন করে পোস্ট করতো। সে ভূবিদ্যা, ওষুধ কোম্পানী এবং কিভাবে একদিন কম্পূ্টারে সংরক্ষিত তথ্যাদি সীমাহীন নক্ষত্ররাজির হয়ে উঠতে পারে সে বিষয়ে মন্তব্য করতো।

টুইটারে সে বিজ্ঞানীদের কাজের প্রশংসা করতো, যেমন প্রয়াত আমেরিকান তাত্বিক পদার্থবিদ রিচার্ড ফেইনমান – যদিও সে তাদের ভর্ৎসনা করে বলেছে, ‘তোমাদের মৃত্যুর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো। ‘তোরাল এক সময় নোবেল পুরস্কার জয়ী যুক্তরাষ্ট্রের পদার্থবিদ ওয়াল্টার কোহনের সঙ্গে সাক্ষাত করে এবং ছবি তোলে। তবে ২০১৫ সালে কোহনের মৃত্যুর পর তোরাল টুইট করে যে, এক অমুসলিম বিজ্ঞানী, ‘দূর্ভাগ্যজনক, দোযখের ছাড়পত্র নিয়ে গেছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের পদার্থ বিজ্ঞানী ওয়াল্টার কনের সঙ্গে তোরাল। স্থান-অজানা।


যুক্তরাষ্ট্রের পদার্থ বিজ্ঞানী ওয়াল্টার কনের সঙ্গে তোরাল। স্থান-অজানা।

সামাজিক মাধ্যমের সূত্র অনুসারে আগষ্টের শুরুর দিকে তোরাল মারা যায়। রাক্কার উত্তরে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কির্দী বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে সে মারা যায়।

এক সাক্ষাৎকারে ঐ জিহাদীর বাবা ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন তোরালের স্ত্রী তার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে টেলিফোনে কথা বলে। তার মৃতদেহ সিরিয়ায় মাটি দেয়া হবে বলৈ তিনি জানিয়েছিলেন।

সুলেমান তোরাল সাংবাদিকদের বলেন মধ্য আগষ্টে তার আংকারার ফ্ল্যাটে কে গিয়ে মৃতদেহ আনবে। কারন তখন তুরস্কের কর্তৃপক্ষ তার মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে তদন্ত করবে বলা হচ্ছিল। তিনি বলেন, “আমরা জানি না সে কিভাবে মারা গেল”। তিনি আরো বলেন, “আমরা তার মৃত্যুর বিষয়টি আংকারার আদালতে তুলেছি এবং অপেক্ষা করছি তাদের উত্তরের”।

পুত্রের বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চান নি তিনি। অন্য আত্মীয়রাও সাক্ষাৎকার শেষ করার অনুরোধ জানান।

আগষ্টের ৮ তারিখে সিরিয়ার রাক্কায় তোরাল মারা যাওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে ছাপানো তার ছবি  

আগষ্টের ৮ তারিখে সিরিয়ার রাক্কায় তোরাল মারা যাওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে ছাপানো তার ছবি  

"দেখা হবে পরজনমে"

রাশিদ তোরালের মৃত্যুর প্রায় একমাস পর ৩১শে আগষ্ট তার ফেসবুকের সর্বশেষ পোষ্ট।

“যদি লম্বা সময় ধরে এখানে না লিখলে জানবেন পৃথিবীতে আমার সময় শেষ হয়েছে এবং আমি পরজনমে পৌঁছে গেছি। আমার জন্য দোয়া করুন যেনো আল্লাহ আমাকে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করেন। এই বার্তা অটোমেটিকভাবে সেট করা হয়েছে। আশা করছি পরজনমে দেখা হবে”।

তার ফেসবুক পাতা চালু আছে। তবে টুইটার এ্যাকাউন্ট সম্প্রতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে কথা বলার সময় টুইটার বলেছে, “২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে তারা ৩৬০০০০ এ্যাকাউন্ট, আইএস ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের আশংকা করে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

তুরস্কের রাজনীতি গবেষক এবং কিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তার শিক্ষক সালিহ ডগান বলেন তাঁর হিসাব মতে তুরস্ক থেকে হাজার হাজার মানুষ আইএসে যোগ দিয়েছে। যদিও তাদের সকলেই সিরিয়ার স্বৈরশাষনের কারনে বিরক্ত হয়েই তা করেছে, ভয়েস অব আমেরিকাকে তিনি বলেন, তাদের একেক জনের উদ্দেশ্য একেক রকম। কেউ হয়তো রক্ষনশীল পরিবাবরে বড়ো হয়ে জিহাদী দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তা করেছে , কেউ মনে করছে তাকে লক্ষ্য করে অবিচার করা হয়েছে, কেউ আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ অথবা আর্থিক লাভের আশায় তা করেছে।

তিনি বলেন, “এটি ভয়াবহ যে মানুষ এভাবে ওদিকে চলে যাচ্ছে”। “আমার ধারনা মোদ্ধা কথা হচ্ছে মানুষের মধ্যে যে শুন্যতা তা পূলণের লক।ষ্যেই মানুষ তা করে”।

আইএস নিয়ন্ত্রিত শহর রাক্কায় তোরাল শিশুদেরকে টেলিস্কোপ শিক্ষা দিত। ৫ই মে ২০১৬ সালে সে টুইটারে এই ছবি প্রকাশ করে।

আইএস নিয়ন্ত্রিত শহর রাক্কায় তোরাল শিশুদেরকে টেলিস্কোপ শিক্ষা দিত। ৫ই মে ২০১৬ সালে সে টুইটারে এই ছবি প্রকাশ করে।

তোরাল সম্পর্কে প্রশ্ন তার জ্যোতির্বিদ বন্ধু বোরাট্যাকের

রাতের আকাশে তারা একদা দেখেছিলেন একটি বর্ননাহীন উজ্জ্বল আলো; বোরাট্যাক যাকে ধারণা করছেন ইউএফও বলে। রাশিদ নীরবে তার কথা শুনতো এবং তা নিয়ে গবেষণা করে। “সে আমাকে বলেছে ‘নারে বোকা,,,এটি একটি উপগ্রহ’। সে তখন আমাকে শেখালো গবেষণা না করে কখনোই সমাপ্তি টানবে না।

ফলে বোরাট্যাক অবাক হয়েছেন সে কিভাবে আইএস এর দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়; কিভাবে সে নির্মমতার প্রতি ঝোঁকে?

“এতে আমার নিজের মনে প্রশ্ন আসে...সে কিভাবে ঐ স্থানে গেল? সে একসময় কৌতুক করতো। কোনো কিছুই গুরুত্ব দিয়ে করতো না। সেই একই ব্যাক্তি মারা গেল মানুষের মাথা কাটতে কাটতে”।

তার মেটুর সহপাঠি সেলিক বলেছে তোরাল পরস্পর বিচ্ছিন্ন দুটি বিশ্বের মধ্যে সেতু বন্ধনে ব্যার্থ হয়েছে।

“আমি বিশ্বাস করি সে খুবই বিভ্রান্ত এবংতার মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল- একদিকে ধর্ম অপরদিকে বিজ্ঞান, এই নিয়ে”। “আমি মনে করি তার অন্তর বিশ্ব ছিল অন্ধকার”.
সেলিক বলেল, “আমি অনুভব করতে পারছিলাম সে আইএসএ যোগ দেয়ার আগেও”।

এই প্রতিবেদনটিতে যারা অবদান রেখেছেন তারা হলেন ভয়েস অব আমেরিকার এক্সট্রিমিজম ওয়াচ ডেস্কের উজভ বুরুত, কাশিম সিন্দেমির এবং রিকার হুসেইন; তুরস্কের আংকারা থেকে সহায়তা করেছেন ইলদিজ ইয়াজিসিওগলু। লিখেছেন ক্যারোল গুয়েনসবার্গ। ছবিগুলো রাশিদ তোরালের ফেসবুক ও টুইটার এ্যাকাউন্টের।